Dhaka.
৩য় ব্যাক্তি এর মাধ্যমে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার পূর্বে কি কি বিষয় চিন্তা করা উচিত?
বাংলাদেশে বর্তমানে অনলাইনে পণ্য এর বিক্রয় বাড়ানোর এক মাত্র পন্থা হয়ে গিয়েছে ফেসবুক। আর ফেসবুক বলতে মূলত ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করার বিষয়টাকেই মূল হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আমার এ লেখায়, ৩য় ব্যাক্তি এর মাধ্যমে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে কি কি ভুল চিন্তা করে থাকি তা নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করবো-
১. কম রেট
বেশিরভাগ ই-কমার্স ব্যবসায়ী এর কাছে মাষ্টার কার্ড (ডুয়েল কারেন্সি কার্ড) নেই। যার কারণে আমরা তৃতীয় কোন ব্যাক্তি বা ব্যবসায়ী থেকে ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন দেয়ার সার্ভিস নিয়ে থাকি, তাদের ফেসবুক পেজের এডমিন (Advertiser) পাওয়ার দেয়ার মাধ্যমে। এ ধরণের তৃতীয় কোন ব্যাক্তি বা ব্যবসায়ী খুজতে গিয়ে আমরা দেখি কে সবচেয়ে কম দামে ডলার বিক্রি এর সার্ভিস দিয়ে থাকে (বর্তমানে সবাই ডলার এর হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, আগে একটা সময় ছিলো প্রত্যেকটা লাইক বা Engagement এর হিসেবে টাকা নিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হতো, বর্তমানের ডলার এর ভিত্তিতে টাকা নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয়া এর পদ্ধতিটি ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক লাভজনক)। যে কথা বলছিলাম, প্রথম চিন্তা যিনি কম দামে ডলার এর জন্য টাকা নিবেন তার মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন দিব। আমি দেখেছি প্রতি ডলার ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে বিজ্ঞাপন এর জন্য টাকা নিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে দেয়া হচ্ছে। যিনি ৮০ টাকা দরে ডলার হিসেবে বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য টাকা নিচ্ছেন তিনিও কাস্টমার পাচ্ছেন আবার যিনি ১২০ টাকা নিচ্ছেন তিনিও পাচ্ছেন।
যিনি ৮০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তিনিও ফেসবুককে বিজ্ঞাপন বাবদ ডলার দিচ্ছেন, আবার ১২০ টাকার ব্যাক্তিও ফেসবুককে দিচ্ছেন, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে একজন কেন ৮০ টাকা আবার অন্য জন কেন ১২০ টাকা নিচ্ছেন? (কেউ কেউ ৯০ টাকা, কেউ কেউ ১০০ টাকা আবার কেউ কেউ ১১০ টাকাও নিচ্ছেন)।
আরো কিছু প্রশ্ন আছে –
> সাধারণত ১ ডলার বলতে আমাদের দেশের ৮০ টাকা বোঝানো হয় (আজ ৮৩ টাকা), তাহলে যিনি ৮০ টাকাই নিচ্ছেন তিনি কি ফ্রি আপনার জন্য কাজ করে দিচ্ছে?
> ফ্রি-তো অবশ্যই করার কথা নয়, তাহলে কি করে ৮০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দিচ্ছে?
> ১২০ টাকা কি একটু বেশি না? প্রতি ডলার এ ৪০ টাকা করে বেশি নিচ্ছে?
প্রশ্ন আর বাঁড়াতে চাচ্ছি না, এভাবে আরো অনেক প্রশ্ন আছে।
“কিন্তু আমি তো স্ক্রিনশট নেই, যিনি কাজ করে দিচ্ছেন তিনিতো মিথ্যে বলছেন না!”
চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই, আমি বিষয়টা সহজ করছি-
আপনি হয়ত ভাবছেন, কম টাকায় বিজ্ঞাপনতো হয়ে গেল ক্ষতি কি?
কোন ক্ষতি নেই, Singapore Dollar আপনি যা রেজাল্ট পাবেন US Dollar এ বিজ্ঞাপন দেয়ার কারণে আপনি এর চাইতে একটু বেশি রেজাল্ট পাবেন, কারণ US Dollar এর মান Singapore Dollar এর চাইতে বেশি। সিদ্ধান্ত আপনার উপর। এখানে কোন ক্ষতি নেই।
বিজ্ঞাপন দেয়ার পূর্বে জিজ্ঞেস করে নিবেন, তিনি কোন ডলার এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিবেন।
মনে রাখবেন, কেউ ফ্রি-তে আপনার জন্য কিছু করবে না, তার লাভ রাখবেই। কম মূল্যে কিছু পেয়ে গেলেন, এর মানে এই নয় যে আপনি লাভবান হয়েছেন।
> যারা ১০০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাদের বিষয়টা প্রায় একই। তারা US Dollar এ বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন এবং প্রতি ডলার এ প্রায় ২০ টাকা লাভ রাখছেন।
> যারা ১২০ টাকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, তারা বিজ্ঞাপন দেয়ার সাথে সাথে আরো কিছু সার্ভিস দিচ্ছেন তাই একটু বেশি রাখছেন।
এ অবস্থায় আমাদের মনে একটা কথা অনেক সময় আসে, ৮০ টাকার ডলার ৯০ টাকা হিসেবে রাখলেইতো হয়, এতো বেশি রাখার দরকার কি। এ প্রশ্নের উত্তর এর জন্য নিচের বিষয়গুলো আপনাকে একটু ভাবা উচিত –
> ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন এর কাজ করেন এমন একজন ব্যবসায়ী যখন ব্যবসায় শুরু করেন তখন ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য তাকেও বিজ্ঞাপন দিতে হয় ফেসবুক এ। অনলাইন এ সক্রিয় থাকতে হয়, কখনো যদি কোথাও দেখে কেউ এ ধরণের সার্ভিস খুঁজছেন তার সাথে যোগাযোগ এর চেষ্টা করতে হয়। ক্লায়েন্ট কে নিজের সার্ভিস বোঝাতে হয়, কেন তার থেকেই সার্ভিস নেবেন তা বোঝাতে হয়, বিভিন্ন সময় ক্লায়েন্ট এর বিভিন্ন বিষয় এর উত্তর দিতে হয়, ফোনে কথা বলতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব না করলে তিনি ক্লায়েন্ট পাবেন না বা ক্লায়েন্ট ধরে রাখতে পারবেন না। এসকল কাজে তার সময় এবং অর্থ এর খরচ হয়। সে সময় এর মূল্য এবং অর্থ তাকে তার ব্যবসায় এর থেকে বের করতে হয়। নয়ত তার পক্ষে ব্যবসায় করা সম্ভব হবে না।
> ধরুন, বিজ্ঞাপনদাতা প্রতি মাসে ১০০০ ডলার (৮০,০০০ টাকা) এর বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকেন। এর মানে তাকে ৮০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। এখানে তেমন বড় ক্ষতি এর সুযোগ নেই, কিন্তু প্রতি মাসে এ ৮০,০০০ টাকা ক্লায়েন্ট এর মাধ্যমে তুলতে হবে এবং আবার ৮০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এ পর্যন্ত বিষয়টি অনেক সহজ মনে হচ্ছে। কারণ, প্রতি মাসে ২০,০০০ টাকা লাভ মনে হচ্ছে সহজেই, কিন্তু বিষয়টি একটু অন্যরকম। টাকা থাকলেই হবে না, এ টাকাকে ডলার এ রুপান্তর করাতে হবে। যদি ব্যাংক এর কথা ভাবেন, খুব সহজেই ডুয়েল কারেন্সি মাষ্টার কার্ড পাওয়া যায় না, ব্যাংক এর খরচ আছে, ডলার কিনতে গেলে একটু বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হয়, কার্ড এর খরচ ইত্যাদি আছে। আবার যদি মনে করেন, ডলার অন্য ভাবে আসছে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই ডলার কিনতে ডলার এর রেট এর থেকে অধিক অর্থ দিতে হচ্ছে। ধরুন, ৮০ টাকার ডলার ৮৫ টাকা বা কিছু ক্ষেত্রে ৯০ টাকা।
> তিনি আপনার জন্য কাজ করছেন, আপনার মত করে বিজ্ঞাপন দিয়ে দিচ্ছেন, এর হিসেব রাখছেন। এ সকল কাজ এর জন্য সময়, তার আসবাবপত্র, কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। এ সকল খরচ বাদ দেয়ার পরে তিনি লাভ এর টাকা এর কথা ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন। যত সহজে প্রতি ডলার এ ২০ টাকা লাভ দেখা যায়, আসলে সেটা তত সহজ নয়। শেষ পর্যন্ত ২০ টাকা লাভ থাকে না।
> অনেক সময়, ফেসবুক মাষ্টার কার্ড ব্লক করে দেয় বা অনেক সময় ক্লায়েন্ট এর কপি রাইট বিজ্ঞাপন এর জন্য ফেসবুক অ্যাড অ্যাকাউন্টও ব্যান হয়ে যায়। এসকল ক্ষতিতো আছেই।
২. বেশি রিচ/বিক্রয়
দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভেবে থাকি তা হচ্ছে, রেসপন্স বা বিক্রয় এর পরিমাণ। কেউ কেউ রিচ বেশি চায়, কেউ কেউ বিক্রয় বেশি চায়। রিচ বা বিক্রয় বেশি হলে বিজ্ঞাপনদাতা ভালো, রিচ বা বিক্রয় কম হলে বিজ্ঞাপনদাতা খারাপ (অন্য কোন বিজ্ঞাপনদাতাকে খুজতে হবে)।
মনে রাখবেন, রিচ এবং বিক্রয় এ দুটো বিষয় টার্গেট, প্রোডাক্ট এবং ভোক্তাদের পছন্দ অপছন্দ এর উপর নির্ভর করে।
এবং এ দুই বিষয় এর জন্য, আমি একজন অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে আপনাকেই (যিনি ব্যবসায় এর মালিক) দায়ী করব, বিজ্ঞাপনদাতাকে নয়।
কারণ, ভোক্তা এর পছন্দ এবং অপছন্দ এর কথা ভেবেই পণ্য নিয়ে কাজ করা উচিত আপনার, আপনার পণ্য কোন ধরণের ভোক্তা এর জন্য তা আপনার জানা উচিত। আপনি বিজ্ঞাপনদাতাকে বলে দিবেন টার্গেট কি হওয়া উচিত, কোন শহর, কোন লিঙ্গ এবং কোন বয়স এ সকল কিছু আপনি বলে দিবেন। বিজ্ঞাপনদাতা আপনার ব্যবসায় এর মার্কেটার নয় যে তিনি এসকল কাজ করে দিবেন, তার উপর নির্ভর করে থাকলে আপনাকে আজ নয়ত কাল সমস্যার সম্মুখীন হতেই হবে।
একটু ভাবুন, কোন কারণে আপনাকে যদি বিজ্ঞাপনদাতা পরিবর্তন করে নতুন বিজ্ঞাপনদাতা এর কাছে যেতে হয় এবং এতদিন কিভাবে বিক্রয় হয়েছে, কি টার্গেট হতো এসব কিছু যদি আপনি না জেনে থাকেন তখন নতুন বিজ্ঞাপনদাতা এর মাধ্যমে আবার নতুন টার্গেট হয়ে যেতে পারে এবং আপনার বিক্রয় কমেও যেতে পারে, তাই নিজের ব্যবসায় এর জন্য, নিজের জন্য সকল তথ্য নিজের জানা উচিত।
দুই পক্ষ এর কথা ভেবে সবসময় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, তাহলে সবসময় ভালো কিছু হবে, নয়ত আজ ভালো কিছু হলেও আগামীকাল ভালো হবে কিনা এ নিয়ে অনেক সন্দেহ রয়েই যায়।
নোট – একজন বিজ্ঞাপনদাতা এর উপর নির্ভর না করে, এ বিসয়গুলো নিজে জেনে রাখা অনেক বেশি জরুরী। ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে হলেও কিভাবে বিজ্ঞাপন দিতে হয়, কিভাবে রিসার্চ করতে হয়, কিভাবে নতুন করে টার্গেট করে আবার বিজ্ঞাপন দিতে হয় এসব বিষয় শেখার চেষ্টা করুন। শিখেই নিজেকে কাজ করতে হবে এমন নয়, অন্য কেউ কাজ করুক, কিন্তু আপনি সঠিক এবং ভুল বিষয়টি বুঝবেন এবং আপনাকে কেউ ঠকাতে পারবে না।
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
অনুপ্রেরণা যোগাতে আমার সাথেই থাকুন ~~ https://www.facebook.com/MoshiurMontyBD/
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বাংলা আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুনঃ
Your email address will not be published. Required fields are marked *