Dhaka.
ডিজিটাল মার্কেটিং পরিসংখ্যান ২০১৮ এবং বিশ্লেষকের মতামত
ডিজিটাল মার্কেটিং পরিসংখ্যান ২০১৮ আপনাকে বর্তমান মার্কেটিং প্লাটফর্ম সম্পর্কে ধারণা দিবে। মার্কেটিং হয়ে থাকে সম্পূর্ণরুপে মার্কেট এর অবস্থা এর উপর নির্ভর করে । মার্কেট এর অবস্থা বলতে আপনি যেখানে মার্কেটিং করতে চাচ্ছেন সে মার্কেটে যদি কোন নিয়ম নীতি থেকে থাকে বা সে মার্কেটে যারা অবস্থান করছেন তারা কি পছন্দ করছেন কি পছন্দ করছেন না বা কিভাবে তারা অবস্থান করছেন তার তথ্যকে বুঝানো হয়। এই তথ্য একত্রিত করে বিবেচনা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার ব্রান্ড বা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে কেমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
একজন মার্কেটার এর জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং পরিসংখ্যান ২০১৮ এর তথ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
যারা ডিজিটাল মার্কেটিং করছেন তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত পরিসংখ্যান সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা উচিত। ডিজিটাল মার্কেটিং পরিসংখ্যান আপনার মার্কেটিং পরিকল্পনায় বিশাল বড় ভূমিকা পালন করবে। আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন কোন বিষয় এর দিকে বেশি নজর দেয়া উচিত এবং কোন কোন বিষয়ে একটু কম কাজ করলেও চলবে।
(পরিসংখ্যানটি অনলাইন রিসার্চ এর মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এবং প্রতিটি বিষয় এর সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং বিশ্লেষক মশিউর মনটি তার মতামতও দিয়েছেন)
১. রিসার্চ বলে, এসইও অপটিমাইজড কন্টেন্ট একটি ব্লগে ২০০০% পর্যন্ত ট্র্যাফিক বাড়িয়ে তুলতে পারে।
মতামতঃ আগে একটা সময় ছিল, যখন ওয়েবসাইট এ শুধুমাত্র আর্টিকেল থাকাই জরুরী ছিল কিন্তু বর্তমানে তা এসইও অপটিমাইজড হওয়াটাও জরুরী। আপনার ওয়েবসাইট এ যদি ব্লগ থেকে না থাকে তাহলে আপনি এখনো অনেক বেশি পিছিয়ে আছে (ধরুন, মার্কেট এর চাহিদা থেকে ৫ বছর পিছিয়ে আছেন)। আপনার ওয়েবসাইট এ যদি শুধুমাত্র আর্টিকেল থেকে থাকে, তা যদি এসইও অপটিমাইজড না হয় তাহলেও আপনি পিছিয়ে আছেন (ধরুন, মার্কেট এর চাহিদা থেকে ৩ বছর পিছিয়ে আছেন)। যে ধরণের ব্যবসায়-ই হোক না কেন, গুগল এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট এ যদি ভালো ট্রাফিক পেতে চান তাহলে অবশ্যই ওয়েবসাইট এ এসইও অপটিমাইজড কন্টেন্ট লাগবে।
২. রিসার্চ বলে, গুগল এ যত সার্চ হয়ে থাকে তার বেশিরভাগ ৪ শব্দ বা তার অধিক শব্দ এর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
মতামতঃ এসইও এর ক্ষেত্রে কিওয়ার্ড নির্বাচন এর সময় আমরা অনেকেই ছোট কিওয়ার্ড নির্বাচন করে থাকি। কিন্তু রিসার্চ থেকে জানা যায়, যারা সার্চ করেন তারা মূলত বড় শব্দ ব্যবহার এর মাধ্যমে তাদের মনের ভাব(তারা কি খুঁজছেন) তা সঠিক ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, যেন খুব কম সময়ের মধ্যে তার রেজাল্ট পেয়ে যান। আমার মতে, ৩-৪ শব্দ এর নিচের কিওয়ার্ডকে টার্গেট করে এসইও অপটিমাইজেশন এর জন্য কাজ করা একদম ভুল সিদ্ধান্ত হবে।
৩. রিসার্চ বলে, যারা অনলাইন এর মাধ্যমে পণ্য সার্চ করে থাকে বা কোন পণ্য এর ওয়েবসাইট দেখে বা কোন বিজ্ঞাপন অনলাইন এ দেখে সে বিজ্ঞাপন এর ওয়েবসাইট বা পেজে গিয়ে কিছু সময় দিয়ে থাকেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১৮% এক দিনের মধ্যেই পণ্যটি কিনে থাকে।
প্রায় ৭২% মানুষ অনলাইন এ যদি তাদের ৫ মাইল এর মধ্যে কোন সপ এর বিজ্ঞাপন দেখে থাকে, তাহলে সেখানে সরাসরি যেতে বেশি পছন্দ করে।
মতামতঃ যারা রি-টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে তাদের উচিত ১-৩ দিন বা সর্বাধিক ৭ দিনের মধ্যে যেসব ট্রাফিক ওয়েবসাইট এ পেয়েছে তাদের টার্গেট করে বিজ্ঞাপন দেয়া।
যদি লোকাল সপ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সপ এর কাছাকাছি মানুষদের টার্গেট করে আলাদা ভাবে বিজ্ঞাপন দেয়া।
৪. রিসার্চ বলে, গুগল এর প্রথম পেজের রেজাল্ট এ প্রায় অর্ধেক HTTPS-এর পেজ থেকে থাকে। প্রায় ৮৪% মানুষ অনিরাপদ ওয়েবসাইট থেকে কোন পণ্য ক্রয় করতে চায় না।
মতামতঃ বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ অনলাইন বিক্রেতা ফেসবুক এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করে থাকে। এ পর্যায়ে বেশি কিছু না বলে, আমি শুধু বলতে চাই, আপনারা একটি ওয়েবসাইট খুলে নিন। ওয়েবসাইট আপনার বিক্রয় বাড়াবে, ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে খুব সহজেই ক্রেতা যে পণ্যটি চাইছে তা খুঁজে বের করে আপনাকে অর্ডার করতে পারবে। ফেসবুক এর মাধ্যমে অ্যালবাম বা পোষ্ট এর মাধ্যমে সব পণ্য দেখানো যায় না এবং পুরনো পণ্য এর বিক্রয় একদম থেমেই যায় বলা যায়, তাই ওয়েবসাইট তৈরি করুন। ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে কম খরচে ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব, একটি ওয়েবসাইট ক্রেতা এর নিকট আপনার ব্যবসায়কে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে।
৫. রিসার্চ বলে, ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ৫০% সার্চ হবে ভয়েস সার্চ এর মাধ্যমে।
মতামতঃ খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে আমরা অলস হয়ে যাচ্ছি বা আমাদের মূল্যবান সময় বাঁচিয়ে সে সময়কে অন্য কাজে ব্যবহার করতে চাচ্ছি।
আপনি ভাবতে পারেন ভয়েস সার্চ এর বিষয়ে গুগল পদক্ষেপ নিবে, মার্কেটার হিসেবে আপনার কি করনীয় আছে?
আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে ধারণা হলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনাকে কিভাবে তৈরি হওয়া উচিত। একটু গোলমেলে বিষয় এটি। মানুষের সময় নেই আপনার আর্টিকেল পড়ার, কিন্তু আর্টিকেল ছাড়া আপনি গুগল এ র্যাআঙ্ক করতে পারছেন না। এ অবস্থায় আপনাকে দুটি পদক্ষেপ নিতে হবেঃ
>>> যখন ভয়েস সার্চ হয়, মানুষ অনেকটা সরাসরি প্রশ্ন করে থাকে। তাই আপনি যখন আর্টিকেল লিখবেন তখন আপনার কিওয়ার্ড এর পাশাপাশি সমার্থক কিওয়ার্ড এবং প্রশ্ন নির্ভর কিওয়ার্ড ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
>>> আর্টিকেল এ লেখা এবং ছবি এর পাশাপাশি ভিডিও বা অডিও দেয়ার চেষ্টা করবেন। যাদের সময় কম তারা সরাসরি ভিডিও দেখবে বা অডিও শোনার পাশাপাশি তাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে।
৬. প্রায় ৬৫% মার্কেটার এর মতামত অনুযায়ী, সঠিক লিঙ্ক বিল্ডিং করা এসইও এর সবচেয়ে কঠিন কৌশল ।
মতামতঃ বাংলাদেশের মার্কেটে ব্যবসায় এর ক্ষেত্রে আমি লিঙ্ক বিল্ডিং এর বিষয় এ তেমন কোন সাজেশন দিতে চাচ্ছি না। শুধু বলতে চাই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন আপনার ব্যবসায় এর জন্য এবং এসইও অপটিমাইজড কন্টেন্ট লেখার চেষ্টা করুন।
৭. প্রায় ৪৬% মানুষ নির্দিষ্ট ঠিকানা খুজে পেতে গুগল মানচিত্র দেখে।
মতামতঃ লোকাল এসইও এর দিকে মনযোগী হওয়া প্রয়োজন এবং আপনার ব্যবসায় এর ঠিকানা গুগল ম্যাপ এ অন্তর্ভুক্ত করুন।
লোকাল এসইও সম্পর্কে আমার একটি বাংলা আর্টিকেল রয়েছে, যা পড়লে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন লোকাল এসইও করার জন্য আপনার কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আর্টিকেলটি পড়তে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুনঃ https://goo.gl/izsNNn
৮. গুগল এ পেইড সার্চ বিজ্ঞাপন এর চেয়ে অরগানিক এসইও এর মাধ্যমে ৬ গুণ বেশি ট্রাফিক পাওয়া যায়। যদিও এক্সপার্টরা পেইড সার্চ বিজ্ঞাপনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যদি ব্যবসায় এর অরগানিক এসইও-তে বিনিয়োগ করার সময় না থাকে।
মতামতঃ ব্যবসায় যদি ছোট বা মাঝারি ধরণের হয়ে থাকে তাহলে ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন দিন এবং গুগল অরগানিক এসইও এর দিকে নজর দিন। ব্যবসায় এর ধরণ যদি বৃহৎ হয়ে থাকে তাহলে ফেসবুক বিজ্ঞাপন এর সাথে সাথে গুগল এ বিজ্ঞাপন দিন। কোন ভাবেই গুগল অরগানিক এসইও যেন বাদ না পরে, সেটা মাঝারি বা বৃহৎ যে ধরণের ব্যবসায় হোক না কেন।
৯. প্রায় ৩৮% মার্কেটার প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার কন্টেন্ট প্রকাশ করে।
মতামতঃ প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১টি এবং সম্ভব হলে ২টি এসইও অপটিমাইজড আর্টিকেল পাবলিশ করার চেষ্টা করুন।
১০. ইমেজ সহ ব্লগগুলো শুধুমাত্র শব্দের ব্লগগুলোর তুলনায় ৯৪% বেশি ভিউস পায়। ভিডিওসহ ব্লগগুলো অরাগানিক সার্চ এর ফলাফল ১৫৭% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে।
মতামতঃ প্রতিটি ব্লগে কমপক্ষে একটি ইমেজ এবং একটি ইউটিউব এর ভিডিও দেয়ার চেষ্টা করুন।
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বাংলা আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুনঃ
১১. অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ আর্টিকেল বড় লেখার পক্ষপাতি ।
মতামতঃ একটি ব্লগ পোস্ট কমপক্ষে ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে থাকা উচিত। মনে রাখবেন, বড় আর্টিকেল কিওয়ার্ড বেশি ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে।
১২. প্রায় ৬৪% অনলাইন ক্রেতারা বলে, সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিও তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
মতামতঃ বর্তমানে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এবং এর সাথে সাথে ফেসবুক, ফেসবুক লাইভ ভিডিও এর দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলছে।
১৩. ব্যবসায় এর জন্য সর্বোত্তম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম:
ফেসবুক, ইউটিউব, লিঙ্কডইন এবং ইনস্টাগ্রাম।
১৪. বর্তমানে প্রায় ৮৬% মহিলা কোন কেনাকাটা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া দেখে নিতে পছন্দ করেন। নতুন কোন কালেকশন এসেছে কিনা বা কেমন মূল্য এখন, তা জানার জন্য।
১৫. যদিও প্রায় ১৬% ১৬-২৪ বছরের বয়সীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রিটিদের অনুসরণ করে। কিন্তু প্রায় ৭০% কিশোররা সেলিব্রিটির চেয়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের বেশি বিশ্বাস করে।
মতামতঃ ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং নিয়ে মার্কেটারদের ভাবা উচিত।
১৬. প্রায় প্রতিটি ব্যবসায় এর সিইও লিঙ্কডইন ব্যবহার করেন এবং প্রায় গড়ে ৯০০+ কানেকশন আছে প্রত্যেকের । যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্রান্ডিং করে এবং অনেক ক্ষেত্রে নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
মতামতঃ নিজের ব্রান্ডিং এর জন্য অবশ্যই লিঙ্কডইন ব্যবহার করুন।
১৭. প্রায় ৮০% সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট মোবাইল এর মাধ্যমে দেখা হয়ে থাকে।
মতামতঃ মোবাইল এর কথা মাথায় রেখে ইমেইজ এর সাইজ ঠিক করা উচিত।
ডিজিটাল মার্কেটিং পরিসংখ্যান ২০১৮ আর্টিকেলটির মূল পরিসংখ্যান অনলাইন থেকে নেয়া এবং সে বিষয় এর উপর মতামত দিয়েছেনঃ
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
Your email address will not be published. Required fields are marked *