Dhaka.
অনলাইন ব্যবসায়ের জন্য একটি ওয়েবসাইট কেন প্রয়োজন ?
অনলাইন এ ব্যবসায় মানেই হচ্ছে একটি ওয়েবসাইট দিয়ে যাত্রা শুরু। কিন্তু আমাদের দেশের অনলাইন ব্যবসায় এর ক্ষেত্রে এ বিষয়টি এখন অন্য দিকে আছে। যারা অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় করেন না, তাদের বোঝানো হয় অনলাইন এ তার ব্যবসায় এর অবস্থান তার ব্রান্ডিং এবং বিক্রয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এবং তখন প্রশ্ন হয় শুরুটা কিভাবে করা যায়। আর শুরু এর কথা বলতে গেলে একটি ওয়েবসাইট এর কথা বলতেই হয়।
কিন্তু বর্তমানে আমরা ই-কমার্স ব্যবসায় শুরু করছি বা লোকাল ব্যবসায়কে অনলাইন এর সাথে সংযুক্ত করছি ৫ মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে একটি পেজ খুলে। আমি বলছি না, ফেসবুক এ পেজে খোলা একটি ভুল কাজ, সাধারণত একটি ওয়েবসাইট এর পর একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়ে থাকে। আবার, একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা যেহেতু একটু ব্যয়বহুল কাজ, সেক্ষেত্রে একটু ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে ব্যবসায়কে সামনের দিকে নেয়া যেতেই পারে যদি বাজেট কম থাকে। তবুও একটি ওয়েবসাইট দরকার তা আমি বলবো। আমার পরবর্তী লেখা গুলো সেই ব্যক্তির বা উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী এর জন্য উপযুক্ত হবেন যিনি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায় করতে চান। যদি আপনার ব্যবসায় স্বল্পমেয়াদী হয়ে থাকে বা আপনি যদি অস্থায়ী ব্যবসায়ী (যে কোন মৌসুম এ ব্যবসায় করে থাকেন) হয়ে থাকেন তাহলে আপনি একটি ফেসবুক পেজ দিয়েই চালিয়ে যেতে পারেন।
চলুন জেনে নেই একটি ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসায় এর পূর্ণতা আনতে কিভাবে সাহায্য করবেঃ
১. ভোক্তা এর আস্থা
বাংলাদেশি একজন ভোক্তা এর হিসেবে, যখন একজন ভোক্তা দেখে একটি ব্রান্ড এর ওয়েবসাইট আছে, তখন একধরণের আস্থা জন্মায়। সে ভাবে, একটি ওয়েবসাইট বানাতে গেলে ভালো টাকা লাগে এবং যেহেতু তারা ওয়েবসাইটও সুন্দর করে বানিয়েছে, নিশ্চয়ই তারা প্রোডাক্টও ভালো করার দিকে নজর দিয়েছে বা আমার একজনের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাবে না। এমনটা কিছু ক্ষেত্রে লোকাল ব্যবসায় এর সময়ও আমরা চিন্তা করি যেমন – পাশাপাশি দুটো একই ধরণের দোকান থাকলে যে দোকানের একটু বড় এবং একটু বেশি গুছানো এবং সাঁজসজ্জা বেশি সে দোকানে আমরা প্রথম ঢুকি, এই ভেবে যে সেখানে ভালো মানের পণ্য পাওয়া যাবে বা অনেক ধরণের পণ্য পাওয়া যাবে। এটি মনস্তত্ত্বিক বিষয়।
২. পণ্য সম্ভার
আপনার অনেক ধরণের পণ্য আছে বা প্রত্যেক মাসে আপনার নতুন নতুন পণ্য আসে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে দোকান থেকে আপনি আপনার আগের পণ্য গুলো ফেলে দেন। ফেসবুক এর ক্ষেত্রে যে পণ্য এর ফটো পোষ্ট করা হয় সে পণ্য গুলোর দিকে ভোক্তার নজর বেশি থাকে বা যে পণ্য এর জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সে সব পণ্যের দিকে নজর বেশি থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে ২-৪ সপ্তাহ আগের পণ্য গুলোর দেখেই না অনেক ভোক্তা কারণ সে সব পণ্যের পোষ্ট নিচে পরে গিয়েছে। সে সব পণ্য বিক্রয় করা তখন কঠিন হয়ে পরে। আবার আগের পণ্যের পোষ্ট বারবার দিলে অনেক ভোক্তা বিরক্ত হন, সেটাও আপনার ব্যবসায় এর জন্য ক্ষতিকর। আপনি বলতে পারেন, ফেসবুক এর সপ অপশন এর মাধ্যমে অনেক পণ্য তুলে ধরা সম্ভব কিন্তু বাস্তবতা বা রিসার্চ এই বলে যে অনেকেই সপ মেনু খুলে দেখেন না (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা)। এসব কারণে একটি ওয়েবসাইট ভালো ভূমিকা রাখতে পারে, আপনি যদি মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার ভোক্তাকে আপনার ওয়েবসাইট এ পাঠান, সেখানে তিনি আলাদা আলাদা মেনু এর মাধ্যমে আপনার সকল পণ্য এর ঝলক খুব সহজেই পেতে পারে।
৩. ব্রান্ডিং
যারা গত কয়েক বছর ধরে অনলাইন এ কাজ করছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১৫ সালের শেষের দিকে ফেসবুক যখন বাংলাদেশে বেশ কিছু দিনের জন্য বন্ধ ছিল, তখন অনেকের অনেক বড় ক্ষতি হয় এবং অনেকেতো অনলাইন ব্যবসায় ছেড়েই দেয়। যদি সে সময় আপনার ভোক্তা আপনার ওয়েবসাইট এর লিঙ্কটি জানতো তাহলে তখন ফেসবুক বন্ধ থাকলেও সে সরাসরি আপনার ওয়েবসাইট এ যেতে পারত। আমি আমার ডিজিটাল মার্কেটিং ক্লাস এ একটি উদাহরণ দেই, যদি YELLOW বলি ঢাকা শহরের অনেকেই হলুদ না ভেবে Yellow Clothing Brand এর কথা ভাববে। আপনি যদি আপনার পণ্য, ভোক্তা সেবা, অফার, মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট আপনার ভোক্তা এর মাথায় দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে যখনই প্রয়োজন হবে অন্য কোথাও আপনাকে না খুঁজে সরাসরি আপনার ওয়েবসাইট এ চলে যাবে।
আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারী ডিজিটাল মার্কেটিং এর ৪২ ঘণ্টার ট্রেইনিং শুরু হতে যাচ্ছে ।
সপ্তাহে ৩ দিন , প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা (শনি – সোম – বুধঃ সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ থেকে রাত ৯ঃ৩০ টা)
আপনি আগ্রহী থাকলে এই লিঙ্ক এ গিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন – https://goo.gl/bKE68d
৪. মার্কেটিং
আপনি মার্কেটিং করছেন আপনার ফেসবুক পেজের। আপনার পেজে লাইক বাড়ছে, পোষ্টে রিচ বাড়ছে, কিন্তু আপনি কোন তথ্য পাচ্ছেন না, কারণ ভোক্তাদের তেমন একটা তথ্য দেয় না। কিন্তু আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট এর মার্কেটিং করতেন সেখানে যদি ট্রাফিক যেত তাহলে আপনি ট্রাফিক এর অনেক তথ্য জানতে পারতেন, কোন পেজে কত ট্রাফিক যাচ্ছে, কোন প্রোডাক্ট আজ কত জন দেখলো, কয়টা বিক্রয় হলো, কোন প্রোডাক্ট এর জন্য অফার দেয়া প্রয়োজন, কোন প্রোডাক্ট এর অফার এর প্রয়োজন নেই কিন্তু আরো সরবরাহ এর প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ভোক্তার তথ্যও আপনি নিতে পারবেন, যেমন – নাম, ইমেইল, ফোন নাম্বার। আপনাকে মনে রাখতে হবে, একটি ওয়েবসাইট হচ্ছে আপনার অনলাইন এর প্রধান সপ আর সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে ভোক্তা এর সাথে সম্পর্ক স্থাপন এবং যোগাযোগ এবং মার্কেটিং এর স্থান।
৫. বাধ্যবাধকতা
ফেসবুক এর বিভিন্ন নিয়ম-নীতি এর কারণে অনেক পণ্য এর পোষ্ট ফেসবুক এ বিজ্ঞাপনের সময় দেয়া যায় না। সে সব পণ্য এর বিক্রয় করা কষ্টকর হয়ে পরে। সে ক্ষেত্রে আপনি ওয়েবসাইট এর সাহায্য নিতে পারেন, আপনি ওয়েবসাইট এর মার্কেটিং করলেন এবং সেখানে সে পণ্যটি পাওয়া গেল।
৬. মালিকানা
ফেসবুক এ ব্যবসায় এর ক্ষেত্রে মালিকানা অনুভূতি তেমন একটা থাকে না বললেই চলো। কারণ পুরোটা বিষয়ই ফেসবুক প্লাটফর্ম এ হয়ে থাকে। কোন কারণে ফেসবুক আপনার পেজ ব্লক করে দিলে বা কোন কারণে আবার ফেসবুক বাংলাদেশে বন্ধ থাকলে আপনি আবার সমস্যার সম্মুখীন হবেন। আবার এ কথাও মানতে হবে ফ্রি জিনিষ কখনোই বড় কিছু পেতে অবদান রাখে না, বড় কিছু এর জন্য আজ বা কাল আপনাকে একটি ওয়েবসাইট নিতেই হবে।
৭. ডোমেইন
ফেসবুক এ যেমন একি ইউজার নেম/লিঙ্ক ব্যবহার করা যায় না ঠিক তেমনি একই নাম/লিঙ্ক এর ওয়েবসাইট নেয়া যায় না। ধরুন, আপনি ফেসবুক এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসায়কে অনেক জনপ্রিয় করলেন এবং কয়েক বছর পরে গিয়ে ভাবলেন আপনার এখন ওয়েবসাইট বানানোর সময় এসেছে এবং তখন দেখলেন আপনার ব্যবসায় এর নামের কোন লিঙ্ক খালি নেই, কেউ না কেউ সেটা তার কোন কাজে ব্যবহার করছে বা কিনে রেখে দিয়েছে, সে অবস্থায় আপনি পরবেন বড় বিপদে, কারণ ব্যবসায় এর নাম পরিবর্তন সম্ভব নয়, কারণ ভোক্তাদের আপনি চিনিয়ে ফেলেছেন। ব্যবসায় এর নামে একটু পরিবর্তন এনে আপনি ডোমেইন নিতে পারেন কিন্তু সেটাকেও আবার ভোক্তাদের মুখে মুখে আনার জন্য আবার মার্কেটিং করতে হবে। তাই, ভালো হয় না যে আপনি প্রথম থেকেই এ কাজটি করে ফেলুন।
৮. ইন্টারনেট এর ব্যবহার
গত ১০ বছর আগে আমরা অনলাইন থেকে পণ্য ক্রয় এর ক্ষেত্রে কতটুকু বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলাম। ৫ বছর আগের কথাই ভাবুন। ২০১২ সালে যখন অনলাইন এ সমগম দ্রুত বাড়ছে তখন আমার Social Media Marketing ট্রেইনিং এ আমি আমার স্টুডেন্টদের বলছিলাম – মহিলাদের পণ্য অনলাইন এ বিক্রয় করা একটু কষ্টসাধ্য হতে পারে। এ জন্য মার্কেটিং এ ভিন্ন ধরণের স্ট্রাটেজি নিতে হবে। নেগেটিভ বলার কারণ ছিল, মহিলারা পণ্য ধরে কিনতে পছন্দ করেন। প্রত্যেকটি নেগেটিভ এর সাথে একটি করে পজিটিভ থাকে, পজিটিভ ব্যাপার ছিল, মহিলাদের কোন পণ্য একবার পছন্দ হয়ে গেলে অন্য কিছু আর পছন্দ হয় না (ছেলেদের অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়টি দেখা যায়)। একজন মার্কেটার হিসেবে আমার দুটি বিষয় নিয়েই কাজ করা দরকার ছিল এবং কাজ করেছি কিন্তু সে মুহূর্তে বলা কঠিন ছিল যে পজিটিভ জিতবে নাকি নেগেটিভ জিতবে। ঠিক তেমনি আজ আপনি মনে করছেন সবাই ইন্টারনেটে ফেসবুক ব্যবহার করতেই আসে, কেউ ওয়েবসাইট তেমন একটা দেখে না। ওয়েবসাইট বানানোর অর্থ শুধু শুধু পানিতে যাবে, একটু ১০ বছর আগের কথা ভেবে দেখুন মানুষ তখন কেমন ইন্টারনেট ব্যবহার করত? এবার ভবিষ্যৎ এর কথা ভাবুন।
আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের মনে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা। পদক্ষেপ নেয়া বা না নেয়া একান্তই আপনার বিষয়। কিন্তু মনে রাখবেন, যদি আগামীকালের কাজ আপনি আজ করে রাখেন তাহলে আপনি এগিয়ে থাকলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে গ্রহণ করা পদক্ষেপ এর কারণে অনেক ক্ষতিও মেনে নিতে হয়। আজ নিয়ে না ভেবে কাল নিয়ে ভাবুন, ব্যবসায় এর উন্নতি প্রতিদিন হবে।
আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারী ডিজিটাল মার্কেটিং এর ৪২ ঘণ্টার ট্রেইনিং শুরু হতে যাচ্ছে ।
সপ্তাহে ৩ দিন , প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা (শনি – সোম – বুধঃ সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ থেকে রাত ৯ঃ৩০ টা)
আপনি আগ্রহী থাকলে এই লিঙ্ক এ গিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন – goo.gl/bKE68d
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
অনুপ্রেরণা যোগাতে আমার সাথেই থাকুন ~~ https://www.facebook.com/MoshiurMontyBD/
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বাংলা আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুনঃ
Your email address will not be published. Required fields are marked *