Dhaka.
ফেসবুক মার্কেটিং ২০১৮
বাংলাদেশে ফেসবুক এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাথে সাথে বেড়েই চলেছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বর্তমানে ২ কোটি ৩০ লক্ষ এর বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে ফেসবুক এ। কত জন সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে বা প্রকৃত অ্যাকাউন্ট রয়েছে তা সংখ্যায় বলা একটু কষ্টসাধ্য বটে। ফেক অ্যাকাউন্ট বাদ দেয়ার অনেক উপায় আছে ফেসবুক এর কাছে এবং ফেসবুক সে গুলো ব্যবহার করে। যাই বলুন না কেনো, ২ কোটি ব্যবহারকারী কম নয়। প্রায় ১৭ (১৬ কোটি ৫০ লক্ষ – ২০১৭) কোটি জনসংখার দেশে ২ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী, যার প্রায় ৭৫% ঢাকা বিভাগ এর এবং প্রায় ৬০% ১৮-৩৪ বছর বয়সের। আমার ধারণা বলে, আগামী কয়েক বছেরর মধ্যে ফেসবুক এ ৫ কোটি বাংলাদেশী ব্যবহারকারী হতে যাচ্ছে এবং যেখানে ৪০-৫০ বছর বয়সের ব্যবহারকারীও অনেক থাকবে। ব্যবহারকারী এর সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে বিক্রয়কারী এর সংখ্যাও। অবশ্য এদের মধ্যে অনেক মৌসুমি বিক্রেতাও আছে। যারা শুধু বিক্রয় এর কথা ভাবে, ভোক্তা এর কথা ভাবে না, ভাবে না ভবিষ্যৎ এর কথা, তাদের প্রোডাক্ট এর গুনগতমান ভালো না এবং তারা প্রোডাক্ট ডেলিভারি এর বিষয় এ তেমন একটা সচেতনও নয়, এমন ব্যবসায়ীরা মার্কেটে বেশি দিন টিকতে পারবে না। কারণ, ভোক্তারা এসব বিষয় এ শিখতে শুরু করেছে, নতুন নতুন অনেক ভালো ই-কমার্স ব্যবসায়ী মার্কেটে আসছে। এক কথায় বলতে পারি, সম্ভবনাময় এ মার্কেটে তারাই টিকে থাকবে যারা পণ্য এর গুনগতমান, পণ্য ডেলিভারি এবং ভোক্তা সেবা এর দিকে নজর দিবে।
মুদ্রার দুই পিঠ এর মত এখানে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, সামনের কয়েক বছর এর মধ্যে যেমন আপনার জন্য বড় সুযোগ একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ী হিসেবে ঠিক তেমনি বাঁধাও রয়েছে। টিকে থাকার বাঁধা। ভুয়া ক্রেতা, অ-পেশাদারী ডেলিভারি কোম্পানি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আপনি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এবং যেহেতু সম্ভবনাময় মার্কেট, সেহেতু সামনের কয়েক বছর এর মধ্যে বিদেশী কোম্পানি দেশে অবস্থান করতে পারে। বিদেশী কোম্পানি দেশে এসে যদি কঠিন নিয়ম নীতি এর মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করে তখন অনেক ভুয়া বিক্রেতা এবং ভুয়া ক্রেতা নাই হয়ে যাবে। আমাদের নিয়ম নীতি কঠিন নয় বলে, ভুয়া এবং অ-পেশাদারী শব্দটি ব্যবসায় এর সাথে যুক্ত হয়ে আছে।
মূল কথা হচ্ছে, সময় অনেক হাতে আছে মনে হলেও সময় খুব কম। তাই ব্যবসায় এর প্রচার, ব্রান্ডিং, গুনগত মানের পণ্য সরবরাহ, সঠিক সময়ে ডেলিভারি, ভোক্তা সম্পর্ক, বিক্রয় উত্তর সেবা এসব বিষয় এ নজরদারি করা উচিত সঠিকভাবে। খেয়াল রাখবেন, সময় এবং অবস্থান কারো জন্য থেমে থাকে না বা অপেক্ষা করে না, হয়ত আপনি এখন খেয়াল করছেন না, কিন্তু সবাই যে খেয়াল করছে না তা কিন্তু নয়, আপনার অবস্থান আপনি হারিয়ে ফেলতে পারেন, তাই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবুন এবং কাজ শুরু করুন।
২০১৮ সালে ফেসবুক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যেসব বিষয় এ আপনাকে গুরুত্ব দেয়া উচিত –
১. প্রায় ৪০% ব্যবহারকারী ফেসবুক এ ব্রান্ডদের পেজ এর সাথে যুক্ত নয়। আপনার যদি কোন সোপ থেকে না থাকে (আপনি যদি শুধু ফেসবুক এর মাধ্যমে ব্যবসায় করেন) তাহলে এটি আপনার জন্য সুখবর। ভোক্তা এর কথা ভেবে পণ্য ডিজাইন করুন বা পণ্য এর আমদানি করুন।
২. প্রায় ৫০% ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রাপ্ত বয়স্ক, তাদের পছন্দ অপছন্দ এর কথা ভেবে কন্টেন্ট তৈরি করুন। তাদের সাথে কমেন্ট এবং মেসেজ এর মাধ্যমে সুসম্পর্ক তৈরি করুন। তারা যেখানে একবার ভালো ব্যবহার পায়, সেখানেই ফিরে ফিরে যায়।
৩. প্রায় ৬০% ফেসবুক ব্যবহারকারী কোন নতুন ডিজাইন বা নতুন পণ্য বা কোন ভালো অফার এর জন্য ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে থাকে বা ফলো করে থাকে। এ কথা মাথায় রেখেই ২০১৮ এর পণ্য ডিজাইন পরিকল্পনা এবং অফার পরিকল্পনা সাজানো উচিত।
৪. এক একটি সময়ে প্রত্যেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এর নিউজফিডে প্রায় ১৫০০ পোষ্ট আসার জন্য প্রতিদন্দিতা করে কিন্তু মাত্র ৩০০ পোষ্ট নিউজফিডে দেখানো হয়। এ ৩০০ পোষ্ট নির্বাচন করা হয়, আপনার পেজের সাথে ঐ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এর কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে (আগের পোষ্ট এর লাইক,কমেন্ট, শেয়ার থেকে বিচার হয়), আপনার পোষ্ট এর বিষয় এর সাথে ঐ অ্যাকাউন্ট এর পছন্দ এর বিষয় আছে কিনা, আপনার বর্তমান পোষ্ট এর অরগানিক লাইক কমেন্ট বেশি হলে ইত্যাদি এর মাধ্যমে। ব্যবহারকারী এর কথা ভেবেই প্রতিদিনের পোষ্ট সাজান। মনে রাখবেন, কেউ প্রতিদিন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখতে পছন্দ করে না, এমনকি আপনি নিজেও পছন্দ করেন না।
আগামী ৭ই ফেব্রুয়ারী ডিজিটাল মার্কেটিং এর ৪২ ঘণ্টার ট্রেইনিং শুরু হতে যাচ্ছে ।
সপ্তাহে ৩ দিন , প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা (শনি – সোম – বুধঃ সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ থেকে রাত ৯ঃ৩০ টা)
আপনি আগ্রহী থাকলে এই লিঙ্ক এ গিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন – https://goo.gl/bKE68d
৫. পোষ্ট এর রিচ নিয়ে কথা বলাটা জরুরী কিন্তু এ বিষয়টি অনেক বিষয় এর সাথে যুক্ত। ছোট পোষ্টের রিচ অনেক ক্ষেত্রেই বেশি হয়। কিন্তু যদি বড় পোষ্ট কোনভাবে ব্যবহারকারী এর দরকারি কোন বিষয় নিয়ে হয় বা কোন শিক্ষামূলক কিছু হয় বা মজার কোন তথ্য হয়, সে ক্ষেত্রে বড় ছোট পোষ্ট এর কোন বিষয় এখানে কাজ করে না।
পেজের ক্ষেত্রে শেয়ার করা পোষ্ট এর রিচ কম হয়। তাই শেয়ার করার চাইতে পেজের ক্ষেত্রে সরাসরি পোষ্ট তৈরি করা উত্তম।
ছবি যুক্ত পোষ্ট এর রিচ অনেক বেশি হয়।
আবার ২০১৭ সালের রিসার্চ বলে, ভিডিও পোষ্ট এর রিচ এবং পোষ্ট এর শেয়ার অনেক ক্ষেত্রেই অনেক বেশি। মনে রাখবেন, ফেসবুক এ সারাসরি আপলোড করা ভিডিও এর কথা বলছি, ইউটিউব এর ভিডিও নয়। ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন যেন শব্দ ছাড়াও ভিডিও বুঝতে পারা যায়, কারণ অনেকেই শব্দ ছাড়া ভিডিও দেখে অনেক ক্ষেত্রে। (সাবটাইটেল যুক্ত করতে পারেন)।
লাইভ ভিডিও এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবহারকারীরাও তা অনেক ভালো ভাবে গ্রহণ করছে। ফেসবুক নিজেও এখন লাইভ ভিডিও এর জন্য মার্কেটিং করছে। তাই কোন ভাবেই এ বিষয়টিকে বাদ দেয়া উচিত হবে না। ভিডিও এর প্রথম উপস্থাপনটাই যেন অনেক ভালো হয়, কারণ অনেকের ১০-১৫ সেকন্ড ভিডিও দেখে ভালো না লাগলে চলে যায়।
৬. প্রত্যেক সপ্তাহে পেজের Insight চেক করার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন এবং দেখুন আপনার লক্ষ এর দিকে সঠিক ভাবে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না।
৭. উপলক্ষ এবং বড় বড় দিন গুলোর চাইতে সাধারণ দিন গুলোতেও ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিন। এতে করে ব্রান্ডিং হবে এবং বড় বড় দিন গুলোতে ভোক্তা প্রথমে আপনার কাছেই আসবে। সাধারণত বড় উপলক্ষ এর দিন গুলোতে অ্যাড এর রিচ কম হয়।
৮. আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কি করছে তার খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করুন …. হাহাহা!
৯. মার্কেটিং বা পণ্য বিক্রয় এর চাইতে ব্রাডিংকে বেশি গুরুত্ব দিন।
১০. প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকে থাকতে আর ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে, একটি ওয়েবসাইট থাকা জরুরী ।
ফেসবুক মার্কেটিং এবং ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন সম্পর্কিত আরো আর্টিকেল পড়তে এই লিঙ্কে ভিজিট করুন – https://goo.gl/Xn8XhL
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
অনুপ্রেরণা যোগাতে আমার সাথেই থাকুন ~~ https://www.facebook.com/MoshiurMontyBD/
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন — https://moshiurmonty.com/
Your email address will not be published. Required fields are marked *