Dhaka.
মোটিভেশন কি জরুরী?
.
Motivation শব্দ এর অর্থ প্রেরণা বা অনুপ্রেরণা। প্রেরণা বা অনুপ্রেরণা বলার চাইতে আমরা মোটিভেশন বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মোটিভেশন বিষয়টির সাথে আমরা অনেক অনেক বছর ধরে পরিচিত হলেও গত ১ বছরে কিছু ঘটনা, কিছু প্রচারণা, কিছু কর্মকান্ড এর জন্য মোটিভেশন শব্দটি শুনলেই অনেকের হাঁসি পায়।
.
আমার ট্রেইনিং এ প্রায় ২০০ ছাত্র-ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম,
মোটিভেশন এই ইংরেজি শব্দটি শুনলে কি তোমরা বিরক্ত হও?
উত্তর ছিল – না!
কেউ যদি কাউকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্য কোন কথা বলে তখন বিরক্ত হও?
উত্তর ছিল – না!
বাংলাদেশের কোন মোটিভেশনাল বক্তাকে তোমরা পছন্দ করো?
উত্তর – (কেউ কোন উত্তর দেয় নি, সবাই একত্রে হেঁসে দিয়েছে।)
.
আপনি জানলে অবাক হবেন, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যিনি কোন মোটিভেশন ছাড়াই জীবনে সফলতা পেয়েছি। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছে যারা তা মেনে নেবে না অথবা তারা বিষয়টি এখনো বুঝেই নি। এমন অনেক মানুষ পাবেন যারা নিজেকে বড় দেখাতে পছন্দ করে, ইচ্ছে করে ভুলে যায় তার শুরুর দিন গুলোর কথা, তখন কারা বা কে তার সাথে ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
এই লেখা এর মাধ্যমে সব পয়েন্ট তুলে ধরা সম্ভব না হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং মজার কিছু ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
চলুন জেনে নেয়া যাক আমাদের জীবনের সাথে মোটিভেশন শব্দটি কিভাবে এবং কতভাবে যুক্তঃ
খুব সহজ ভাষায় আমার কাছে মনে হয়, Motivation শব্দ এর অর্থ “মনে সাহস যোগানো”।
একটু ছোট বেলার কথা মনে করে দেখেন –
মা খাবার খাওয়ার সময় বলতেন,
বাবা, আরেক গাল খেতে পারবে, এইতো শেষ, আর একবার।
আমরা বলতাম,
না, মা! একদম পেট ভরে গেছে আর পারছি না খেতে।
মা বলতেন,
পারবে বাবা, একবার চেষ্টা করো তুমি পারবে, এইতো শেষ হয়ে গেল।
এবং আমরা খেয়ে ফেলতাম।
“মা পাশে থেকে মনে সাহস যোগাতেন এবং আমরা খেয়ে ফেলতাম – ভেবে দেখুন আপনি বড় হয়ে যাওয়ার পর কি আর এমন করে এক গাল বেশি খাবার খান?”
.
.
এবার পথ চলার সময়ের কথা মনে করুন,
পথ যখন সোজা থাকতো না,
তখন লাফ দিতে হতো,
আমরা কি জানতাম কি করে লাফ দিতে হয়,
বাবা শেখাতেন,
তারপরও আমরা ভয় পেতাম, যদি লাফ দিতে গিয়ে পরে যাই।
বাবা সাহস যোগাতেন, হাত ধরতেন তারপর আমরা লাফ দিতাম,
যখন সঠিক জায়গায় পা রাখতে পারতাম, তখন আমাদের আনন্দ কে দেখে .
.
.
বড় ভাই বা বোন, আমাদের জীবনের রং শেখাতো, খেলা শেখাতো, অনেক সময় পড়াশুনা শেখাতো, আরো কত কি।
বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর, স্যার আমাদের আদর করে পড়ালেখা শেখাতেন, এই বিদ্যালয় থেকে আমাদের জীবনের ঘরের বাইরে বের হয়ে নতুন কিছু শেখার দিন শুরু হত।
বিদ্যালয়ে যদি অন্য কোন ছাত্রের সাথে ঝগড়া হয়ে যেত, আর যদি কোন কারণে মারামারি শুরু হয়ে যেত, তখন যদি আপনার বন্ধুরা আপনার নাম ধরে ছন্দে ছন্দে ডাকতো, (মশিউর!মশিউর!মশিউর!) তখন যেন মারামারিতে আরো শক্তি চলে আসতো। বন্ধুদের ছন্দ মনে সাহস যোগাতো। হাহাহা!
.
.
এমন করে কলেজ জীবনে, আমাদের খুব কাছের বন্ধু হয়ত আমাদের মনে সাহস দিয়েছে, যখন কোন চিন্তায় বা কষ্টে ভেঙ্গে পরেছি, তখন বলেছে, তুই পারবি! নয়ত ধমক দিয়েছে কেন ভুল কাজ করছি, কেন ভেঙ্গে পরছি। বন্ধুর ধমক খেয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছে জেগেছে।
.
খুব কোন আপন জন, এভাবে বলেছে (তুমি পারবে) যেন মনে হয়েছে আমার প্রতি তার অনেক বিশ্বাস, তার বিশ্বাস ভাঙা আমার উচিত হবে না, এভাবে হয়ত আমরা অনেক অসাধ্য কে অনেক সময় সাধন করেছি।
.
একটি ঘটনা বলি,
দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়, আমার কোচিং এর একটি মেয়ে বান্ধুবিকে আমার মহল্লার কিছু ছেলে কোচিং এ আসা যাওয়ার সময় বিরক্ত করতো। তাই সে সবসময় সাথে এক বোনকে নিয়ে কোচিং এ আসতো, সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা গ্রুপ স্টাডি জরুরী, কিন্তু মেয়েটি গ্রুপ স্টাডি সময় থাকতে পারবে না। সবাই জিজ্ঞেস করলো কেন, সে তার সমস্যা এর কথা বললো এবং বললো তার সে বোন সে সময় এসে নিয়ে যেতে পারবে না, তাই আগেই তার বোনের সাথে চলে যেতে হবে। আমার অন্য বন্ধুরা আমাকে বললো তোর মহল্লা তুই কিছু কর, আমি শান্ত একটা ছেলে, আমার আসলে কিছুই করার নেই এই বিষয়ে, কিন্তু বন্ধুরা এমন ভাবে বলছিল মনে হচ্ছিল, আমি মনে হয় একটা পদক্ষেপ নিলেই সমস্যার সমাধান হবে, আমি বললাম ঠিক আছে, গ্রুপ স্টাডি শেষ করে তোর বাসা পর্যন্ত আমি তোকে দিয়ে আসবো। মনে মনে ভাব ছিলাম কি যে হবে, আমাকে ছেলে গুলো ডাক দিলে আমি কি করবো তখন, তারা তো আমার চাইতে বয়সে বড়। মেয়েটি মনে সাহস পেল, গ্রুপ স্টাডি এর কয়েক সপ্তাহ আমি তার বাসা পর্যন্ত তাকে পৌঁছে দিয়ে এসেছি, কোচিং থেকে ১০ মিনিট এর হাঁটার রাস্তা ছিল, ঐ ছেলে গুলো তাকে বিরক্ত করেনি এবং আমাকেও কিছু বলেনি। আমি কোন প্রভাবশালী পরিবার এর কেউ নয়, তবুও তারা কেন কিছু বলেনি জানি না। সে দিন আমার বন্ধুরা সেভাবে না বললে আমি কখনোই এমন কোন কাজ করতাম না। তাদের কারণেই সহজে সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।
.
.
আরেকটি ঘটনা বলি,
আমি প্রথম যখন ফ্রীল্যান্সিং কাজ শুরু করি, তখন সহজে কাজ পাচ্ছিলাম না। সারাদিন কম্পিউটার এর সামনে বসে থাকা, কাজ এর জন্য আবেদন করা, নতুন কাজ শেখা, আর যখন আশাহত হয়ে পরতাম তখন ইউটিউব এ মোটিভেশনাল ভিডিও দেখতাম নিজেকে উজ্জীবিত রাখার জন্য। একটা ভিডিও দেখে জেনে ছিলাম “Turning Point” সম্পর্কে। Turning Point বলতে এমন একটি সময়কে বোঝায় যখন মানুষের জীবনে বড় পরিবর্তন আসার সময় হয়, কিন্তু ঠিক তখনই সুযোগ এর সাথে সাথে অনেক অনেক সমস্যাও দেখা দেয়, বেশিরভাগ মানুষ সমস্যাকেই ভাবতে থাকে, মনে কষ্ট পায়, আর কোন কাজ করতে পারে না এবং এর মধ্যে সুযোগ হারিয়ে যায়, তখন মানুষের উচিত সুযোগ এর জন্য কাজ করা এবং সমস্যা কমানোর জন্য আরো বেশি বেশি কাজ করা। এ বিষয় সম্পর্কে জানার বেশি দিন যায় নি আমার জীবনে এমন একটি মুহূর্ত আসে। আমি একত্রে কয়েকটি কাজ পাই। ক্লায়েন্ট আমাকে বলে, এই কাজ গুলো ডেড লাইন এর আগে জমা দিতে পারো তাহলে তোমাকে আরো কাজ দিব, আমি অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে যাই কাজ নিয়ে। হঠাৎ করে দেখি আমার ইন্টারনেট কাজ করছে না। আমি তখন BTCL এর ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তাদের সাথে যোগাযোগ করি, তারা জানায় তারা সিস্টেম এ কাজ করছে, ইন্টারনেট ঠিক হতে হতে কয়েকদিন সময় লেগে যাবে। আমি অনেক চিন্তিত হয়ে যাই। সে মুহূর্তে আমার মনে পরে “Turning Point” এর কথা। আমি থেমে না থেকে ভাবতে থাকি কি করা যায়।
.
.
তখন Banglalion একদম নতুন। আমার রুমে Banglalion এর কানেকশন তেমন একটা পাওয়া যায় না। আমার তখন ল্যাপটপও ছিল না যে আমি অন্য রুম এ গিয়ে কাজ করবো। দৌড়ে গেলাম, এক বন্ধুর কাছে, তার ল্যাপটপ ধার নিলাম, এক ঘণ্টার জন্য, গেলাম আরেক বন্ধুর কাছে, তার থেকে Banglalion এর মডেম ধার নিলাম। বাসায় এসে দেখতে লাগলাম, কোন ঘরে ইন্টারনেট পায়, পেলাম অন্য ঘরের কোণায়।, ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে। ল্যাপটপ এবং মডেম দিয়ে আসলাম, বাসা থেকে টাকা নিয়ে একটা মডেম কিনলাম। ঘেমে একদম ভিজে গেছি। কিন্তু এখনো মূল কাজ বাকি। আমি আর আমার বড় বোন মিলে এক রুম এর আসবাবপত্র অন্য রুমে সরিয়ে সেখানে আমার ডেস্কটপ বসালাম। এমন কাজ করতে করতে সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গেছে। দুপুর এ কিছু খাই নি, ভাবলাম কম্পিউটারটা ছেড়ে দুপুর এর খাবার খেয়ে নেই। কম্পিউটার এর সুইচ দেয়ার সাথে সাথে একটা আওয়াজ হলো এবং বিদ্যুৎ চলে গেল। আমি পুরো হতবাক হয়ে গেলাম, এ কি হলো? পাশের বাড়িতে খবর নিয়ে দেখলাম, সেখানে বিদ্যুৎ আছে, অর্থাৎ আমি কম্পিউটার সেট করার সময়, কোন তার অন্য তার এর সাথে এক করে ফেলেছিলাম, যার কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা ঠিক হতে হতে রাত ১টা বেজে যায়। সারাদিনের কষ্ট এর পর শরীরে আর শক্তি নেই। আমার তখন কোন স্মার্ট ফোনও ছিলনা যে আমি তা দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করবো। মনে অনেক কষ্ট পেলাম। ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখলাম, BTCL এর নেট কাজ করছে, আবার দ্রুত ডেস্কটপ আরেক জায়গায় এনে দেখলাম ক্লায়েন্ট জব বাদ দিয়ে দিয়েছে, কারণ গত ২৪ ঘণ্টায় আমার কোন উত্তর সে পায়নি। কষ্ট পাই অনেক কিন্তু থেমে থাকি নি, আবার নতুন কাজের জন্য চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু সে দিনের পর আমাকে আর পিছে তাকাতে হয় নি, এমন কষ্টের ঘটনাও জীবনে আসে নি। আমি মনে করি সে দিনটা ছিল আমার “Turning Point”। আমি যদি এ বিষয়ে না জানতাম তখন অপেক্ষা করতাম কখন ইন্টারনেট আসবে। বা মনে কষ্ট পেয়ে হাঁটতে বেড়িয়ে পরতাম, কিন্তু “Turning Point” এ শব্দটি মনে সাহস দিয়েছে। আমি আরো কষ্ট করেছি এবং আল্লাহ্ আমাকে আমার কষ্টের ফল দিয়েছেন।
.
বাবা, মা, ভাই, বোন, স্যার, পছন্দের কোন ব্যাক্তি, খুব কাছের কোন মানুষ, অফিসের বড় কেউ এভাবে কোন না কোন সময় তাদের কোন না কোন কাজ বা কথা দিয়ে আমাদের মনে সাহস দিয়েছে, হয়ত বুঝেছি, হয়ত না বুঝেই মনে শক্তি পেয়েছি। তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
এছাড়া আমরা হয়ত বাইরের কোন ব্যাক্তি এর মাধ্যমে বা ইন্টারনেট থেকে কারো বক্তব্য শুনে মনে সাহস পেয়েছি, তাদের অবদানও আমাদের জীবনে কম নয়।
.
এবার একটু ভালো করে চিন্তা করুন,
যত গুলো কথা বললাম এবং উদাহরণ দিলাম, সব আমাদের কম বয়সের, আমরা আমাদের পরিবার বা বন্ধু এর মাধ্যমে মনে সাহস পেয়েছি, আর একটি উদাহরণ দিলাম, যে সাহস যোগাতে বাইরের কোন ব্যাক্তি সাহায্য করেছে।
একটা বয়স পরে অনেক সময়, অনেক কথা বা ঘটনা পরিবার এর সাথে বলা যায় না। বা অনেক পরিবার এর বাবা-মা একটু রাগী হলে অনেক কথা তাদের সাথে শেয়ার করা যায় না, বা অনেক সময় অনেক বাবা-মা ভাই-বোন তাদের ছোট ভাই-বোনকে সহজে কথা গুলো গুছিয়ে বলতে পারে না, হয়ত বাইরে বলছে কিন্তু নিজের সন্তান এর বেলায় বা ভাই-বোন এর বেলায় পারছে না, এমন সমস্যা দেখা দেয় যখন আমাদের বয়স একটু বেশি।
আমি অনেক পরিবার এ এই বিষয়টি দেখেছি, ছেলে বড় হয়ে গেছে, কিন্তু বাবা কিছু বিষয় সহজে বলতে পারছে না, তখন অন্য কাউকে অনুরোধ করেছে (খালাতো বা মামাতো বা চাচাতো ভাইকে) ছেলের সাথে কথা বলার জন্য। অনেকক্ষেত্রে ছেলে বাবা এর সাথে সহজে কথা বলতে পারছে না। অবশ্যই আমাদের উচিত সরাসরি গিয়ে কথা বলার, কিন্তু বলা যতটা সহজ কাজ ততটা সহজ নয় অনেক ক্ষেত্রেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে অনেক বিষয় সম্পর্কে আপনার বাবা বা কাছের কেউ কিছু বললো না, যেমন আমি “Turning Point” জেনে ছিলাম ইন্টারনেট থেকে। অবশ্য সে সময় আমার বাবা পৃথিবীতে ছিলেন না, তার সাথে কথা বলার কোন সুযোগই ছিল না। আমার মত আরো অনেকেই থাকতে পারে।
তাদের জন্য ভরসা হচ্ছে, মোটিভেশনাল বক্তা।
পুরো পৃথিবী এর মধ্যে অনেক অনেক মোটিভেশনাল বক্তা এর মধ্যে আমার প্রিয় ৫ জন বক্তা হচ্ছেন –
Tonny Robbins.
Eric Thomas.
Nick Vujicic.
Robert Kiyosaki.
Les Brown.
বাংলাদেশের মধ্যে আমার প্রিয় বক্তা হচ্ছেন –
এইতো সবাই আবার হাঁসাহাঁসি শুরু করবেন।
আচ্ছা এ সম্পর্কে কথা না বলি।
দেখুন, আন্তর্জাতিক ভাবে যারা জনপ্রিয়, তাদের কথা, তাদের উদাহরণ এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় উঠে আসবে পাশ্চাত্য এর ঘটনা, তাদের শহর, তাদের দেশ নিয়ে কথা। তা আমাকে অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু আমার মনে হয় যদি আমার দেশ, আমাদের সমস্যা নিয়ে উদাহরণ দেয়া হত তাহলে হয়ত আমি বুঝতে পারতাম এমন ঘটনা এর সময় আমার কি করা উচিত। কিভাবে নিজের মনের শক্তিকে ধরে রাখা উচিত? কিভাবে আরো সাহস নিয়ে সামনে যাওয়া উচিত। তাই আন্তর্জাতিক বক্তা এর চাইতে অনেক অনেক বক্তা দরকার, যারা আমাদের দেশের। মানুষ এর নেগেটিভকে না টেনে মানুষ যে বিষয় এ ভালো তা নিয়ে কথা বলা উচিত আমাদের, তাহলে আমরা কিছু শিখতে পারবো এবং জানতে পারবো।
.
https://www.youtube.com/watch?v=lA1u4D_GaJk
.
আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় এসব বক্তাদের ভিডিও দেখা এবং লেখা অনলাইনে পড়ার চাইতে তাদের কথা যদি সরাসরি শুনতে পেতাম তাহলে হয়ত নিজের মধ্যে আরো শক্তি পেতাম। ঘটে যাওয়া ঘটনা এর ভিডিও দেখা, আর সবার সাথে একত্রে বসে সে ব্যাক্তির কথা শোনা এক বিষয় নয়। যদি একই হত তাহলে আমরা কেউ Star Cineplex এ গিয়ে সিনেমা দেখতাম না, ঘরে বসে ছবিটি দেখতাম। সরাসরি উপভোগ করা, আর একা দেখা এক বিষয় নয়।
যদি বিদেশী বক্তাদের আমরা এত প্রাধান্য দিতে পারি তাহলে কেন বাংলাদেশীদের নয়, কারণ তারা বাংলাদেশী। হাঁসাহাঁসি এর যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু বিদেশী বক্তারা কিন্তু ১ বছরেই আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় হয়নি বা বাংলাদেশী যে বক্তাকে নিয়ে এত কিছু তিনি একাই কিন্তু বক্তা নন। সুযোগ না দিলে ভালো কিছুর জন্ম হবে না। বাংলাদেশে অনেক অনেক ভালো বক্তা আছে, আমাদের হাঁসাহাঁসি এর কারণে এখন কেউ কথা বলতে চায় না। এতে ক্ষতি হচ্ছে আমাদের কারণ, আমরা জানতে পারছি না, আমরা শিখতে পারছি না, আমরা আমাদের সমস্যা কারো কাছে মন খুলে বলতে পারছি না। এমন অনেক অনেক ব্যাক্তিদের দরকার যাদের কাছে সমস্যা এর কথা বলা যায়, এবং তার কথা শুনে মনে সাহস পাওয়া যায়, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। পাশের দেশের Sandeep Maheshwari এর জনপ্রিয়তা আমাদের দেশে কম নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এসব কথা অন্য কেউ বলুক, আমরা বলা শুরু করবো ব্যবসায় করতে আসছে।
.
.
ভালো কথা, যে বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো তেমন জনপ্রিয়তা পেলো না তা দিয়ে কিভাবে ব্যবসায় হবে। জনপ্রিয়তা পেতে হবে, তারপর কেউ ব্যবসায় করবে। একজন বক্তা যখন তার সময় নষ্ট করে কোথাও কথা বলতে আসবেন, তখন তার জন্য পারিশ্রমিক চাইতেই পারে। দাঁড়িয়ে কষ্ট করে কথা বলবেন তার নিশ্চয়ই একটা মূল্য আছে, যার ভালো লাগবে তিনি শুনবেন, যার ভালো লাগবে না তিনি আসবেন না। একটা ইভেন্ট সাজাতেও খরচ আছে, হল রুম এর খরচ আছে, ইভেন্ট মার্কেটিং এর খরচ আছে, আরো অনেক কিছু, নয়ত আপনি জানবেন না আপনি আসবেন না। আর কয়টাই বা ইভেন্ট হয় মাসে যে বক্তা একদম মাসে মাসে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে ফেলবে। আমি আর আপনিই বা কয়টা ইভেন্ট এ যাই যে প্রত্যেক মাসে আমাদের হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে।
.
একজন ব্যাক্তি বললেন,
তিনি নাকি তারা পড়াশুনা জীবনে অনেক ফেল করেছেন। সাময়িক পরীক্ষায় নাকি ৫ এর অধিক বিষয়ে ফেল করতেন। সে এখন খুব ভালো চাকুরী করলেন। জানতে চাইলে কিভাবে ফিরে আসলেন ভালো পথে বা যারা এখন খারাপ রেজাল্ট করছে তাদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তিনি বললেন – “তাদের অনুপ্রাণিত করতে হবে”।
আমি জিজ্ঞেস করলাম অনুপ্রেরণা দিলেই কি হয়ে যাবে?
তিনি বললেন, কার অনুপ্রেরণা বা কোন ধরণের অনুপ্রেরণায় যে সে বিশ্বস্ত হবে তা বলা যায় না, কিন্তু তাকে যদি একবার বিশ্বস্ত করা যায় তাহলে সে মনের শক্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেই সঠিক পথে ফিরে আসবে।
কাউকে না কাউকে তো এই কাজটি করতে হবে।
পৃথিবীতে এমন অনেক ব্যাক্তি আছে,
যারা এক কথায় বলবে, “মোটিভেশনাল বক্তা” খারাপ।
তারা ঠিক ক্লাস এর সেই ফাস্ট বয় এর মত,
যে নিজে জেনে গেছে কিভাবে প্রথম হতে হয় কিন্তু আর কাউকে জানাতে চায় না।
কারণ অন্যরা জানলেইতো অন্য কেউ যদি তার চাইতে ভালো করে ফেলে এবং প্রথম হয়ে যায়।
আমরা কি এমন ব্যাক্তিদের পছন্দ করি?
মাসে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন এর চাইতে কিছু সময় মানুষের জন্য দিয়ে তার জীবনের পরিবর্তন এর কাজ করাটা সবচেয়ে উত্তম।
আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করলে শুধু আপনার জীবনের পরিবর্তন হবে, কিন্তু কম উপার্জন করে মানুষের জন্য সময় দিলে সে সঠিক পথ সম্পর্কে জানবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এবং তার উপার্জন হবে এবং এর সাথে সাথে তার পরিবার এর উন্নয়ন হবে। এতে সবচেয়ে খুশি হবেন আল্লাহ্, আল্লাহ্ আমাদের উপার্জন দিচ্ছেন শুধু নিজের মনের সখ এবং শান্তি পাওয়ার জন্য নয়, সাথে সাথে অন্যদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য। তা আপনি যেভাবে পারেন, সময় দিয়ে, সঠিক পথ দেখিয়ে, মনে সাহস জুগিয়ে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে, অর্থ দিয়ে …………. আপনি যেভাবেই পারেন না কেন।
.
.
শুধুমাত্র একজন বক্তা নয়, আমরা সবাই পারি আমাদের সবার দিক থেকে এই অনুপ্রেরণা এর হাত বারিয়ে দিতে। যেমন – আপনি SSC পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছেন, আপনি এখন নবম এবং দশম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক পথ দেখিয়ে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, জানাতে পারেন কি ধরণের ভুল আমরা এ সময় করে থাকি, এবং কিভাবে নিজেকে এসব ভুল থেকে দূরে রাখা যায়।
আপনি একটি কোম্পানিতে ৩ বছর ধরে কাজ করছেন, নতুন ছেলে/মেয়েটি চাকুরীতে আসার পর তাহলে সঠিক কাজ দেখাতে পারেন, বুঝাতে পারেন কিভাবে কাজ করলে অফিসে ভালো করা যাবে, কোন বস কোন ধরণের কাজ পছন্দ করেন।
এমন নয় যে, সবাই আপনার কথায় সঠিক পথে আসবে, কিন্তু একজনও যদি আসে তাতেই তার পরিবর্তন হবে এবং আপনি পাবেন অনেক শান্তি। এই ভালো কাজ এর জন্য আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আপনার বিপদ কমিয়ে দিবেন, বিপদের দিনে আপনাকে সাহায্য পাঠাবেন।
.
আমরা পারি, চাইলেই পারি।
শুধু বক্তা এর দরকার নয়,
নিজের জায়গা থেকেই আমরা পারি অপরের জন্য কাজ করতে,
যখন আপনি অপরের জন্য করবেন,
দেখবেন একদিন আপনার জন্য অন্য কেউ করবে।
নিজেকে বড় মনে করার মাধ্যমেই বড় হওয়া যায় না,
বড় সেই, যাকে মানুষ মন থেকে বড় মনে করে।
অপরের জীবনে আলো ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে যে শান্তি পাওয়া যায়,
তা লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করেও পাওয়া যায় না।
আমি বলছি না, আপনি লক্ষ টাকা উপার্জন না করুন,
ধরুন আপনি, ৫০ হাজার টাকা মাসে উপার্জন করেন,
মানুষের জন্য একটু সময় দিতে গেলে আপনার ৫০০০ টাকা ক্ষতি হতে পারে,
তারপরেও দেখুন ৪৫০০০ টাকা থাকবে, তা দিয়ে আপনি চলতে পারবেন,
কিন্তু আপনার দেয়ার সময়ের কারণে আরেক পরিবারে হয়ত তিন বেলার ভাত জুটবে,
অবশ্যই আরেক পরিবার এর উন্নয়ন এর জন্য নিজের অল্প কিছু ক্ষতি হওয়াও উত্তম।
.
.
Your email address will not be published. Required fields are marked *