Dhaka.
ফাইভার গিগ মার্কেটিং
ফাইভার ব্যাপক জনপ্রিয় একটি মার্কেটপ্লেস। আমাদের দেশের অনেক ফ্রীল্যান্সার ফাইভার দিয়ে তার ফ্রীল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করছে। ৫ ডলারের মাধ্যমে খুব ছোট ছোট কাজ করে এই মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করা যায়।
এই মার্কেটপ্লেসটি অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে আলাদা। এখানে কোন বিড করে কাজ পেতে হয় না।। কারণ এই মার্কেটপ্লেস একটি দোকানের মত। এখানে আপনি আপনার এক একটি দক্ষতার উপর গিগ তৈরি করে রাখবেন। বিভিন্ন ক্লায়েন্ট সেই দক্ষতা অনুযায়ী আপনার গিগ অর্ডার করবে, আপনার দ্বারা কাজ করিয়ে নিবে এবং আপনাকে পেমেন্ট দিবে। গিগ বলতে পণ্যকে বোঝানো হয় এই মার্কেটে। যেমন আপনি ৫ টি ছবি এর ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন করে দিবেন এবং এর জন্য আপনি ৫ ডলার নিচ্ছেন এবং এটিকেই একটি গিগ বলা হয়। নতুন ইউজার তার অ্যাকাউন্ট এ ৭টি গিগ দিতে পারবেন।
ফাইভারে কয়েকভাবে গিগ সেল করতে পারেন। প্রথমত আপনার গিগ র্যাঙ্ক করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। যদি আপনার গিগ র্যাঙ্ক করে তাহলে সহজেই ক্লায়েন্ট আপনাকে খুজে পাবে এবং অর্ডার করবে। তাই গিগ তৈরির সময় ভালোভাবে এসইও করুন।
কিন্তু শুধু এসইও করে থেমে থাকলেই হবে না, গিগ এর জন্য আলাদা ভাবে মার্কেটিংও করতে হবে। এছাড়া প্রথম দিকে বিক্রয় করা অনেকটা কষ্টকর হবে।
এছাড়াও আপনার সকল গিগ র্যাঙ্ক করবে তার নিশ্চয়তা নেই। গিগ র্যাঙ্ক না করা পর্যন্ত কি আপনি অপেক্ষা করবেন, আপনি বিভিন্নভাবে মার্কেটিং করেও অনেক অর্ডার পেতে পারেন।
ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে মার্কেটিং~~
প্রফেশনালভাবে গিগ মার্কেটিং করতে হলে একটি ওয়েবসাইট থাকা প্রয়োজন। কারণ একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিজের সম্পর্কে সহজেই সবকিছু তুলে ধরা যায়। কোন কোন কাজগুলো আপনি পারেন, আগের কাজের অভিজ্ঞতা, আগের ক্লায়েন্টের অভিমত, কাজের স্যাম্পল ইত্যাদি একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায়। এই সকল কিছু দেখে ক্লায়েন্ট গিগ অর্ডার করতে অনুপ্রানিত হয়।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গিগ মার্কেটিং করতে হলে প্রথমে আপনাকে সঠিকভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসতে হবে। প্রথমদিকে ডোমেইন হোস্টিং নেয়া যদি কষ্টসাধ্য হয় তাহলে ফ্রী ওয়েবসাইট দিয়ে শুরু করতে পারেন, বসে থাকার চাইতে কিছু করা উত্তম।
আপনার ওয়েবসাইটটি হতে হবে আপনার সিভির মত। যাতে একজন ক্লায়েন্ট সহজেই জানতে পারে আপনি কি কি কাজ জানেন এবং আপনার কাজে আপনি কতটুকু দক্ষ। এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। আপনি ফ্রী ওয়েবসাইট করতে চাইলে ব্লগস্পটের মাধ্যমে করতে পারেন।
১. হোমপেজঃ
আপনাকে হোম পেজটি সাজাতে হবে চমৎকারভাবে। আপনার হোম পেজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করুন। বর্তমানে অনেক ফ্রী থিম পাওয়া যায়। একটি প্রফেশনাল থিম কিনে কাজ করুন। আপনার ছবি, আপনার সার্ভিস, আপনার সবচেয়ে ভালো গিগগুলো এবং আপনার কাজের জন্য একটি টিম রয়েছে তাদের ছবি ইত্যাদি হোম পেজের বিভিন্ন ভাগে রাখুন। হোম পেজে নিজেকে যত দক্ষতার সাথে তুলে ধরতে পারবেন তত বেশি কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
২. গিগ পেজঃ
ওয়েবসাইটে ফাইভার গিগের জন্য একটি পেজ তৈরি করুন। সেই পেজটি মেনুতে যুক্ত করুন। সেই পেজে আপনার সকল গিগের টাইটেল, গিগের মূল্য এবং গিগের ছবি সহ তুলে ধরুন। কোন ভিজিটর আসলে যেন তার চাহিদা মত গিগটি সহজে খুজে পায় এমন ভাবে গিগ তুলে ধরুন। প্রতিটি গিগের টাইটেল বা গিগের ছবি আপনার ফাইভার গিগের সাথে লিঙ্ক করে রাখুন। যাতে ভিজিটর যেকোন গিগ অর্ডার করতে চাইলে ক্লিক করার সাথে সাথে ফাইভার গিগ পেইজে চলে যেতে পারে।
৩. পোর্টফোলিও পেজঃ
ওয়েবসাইটের একটি পেজ পোর্টফোলিও পেজ হিসেবে তৈরি করুন। সেই পেজটিও মেনুতে রাখুন। পোর্টফোলিও পেজটিতে আপনার সকল ধরণের ভালো কাজের ছবি গুলো রাখুন। আপনি যদি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হোন তাহলে আপনার তৈরি করা ভিজিটিং কার্ড, ফ্লায়ার, লোগো ইত্যাদি রাখুন।
আপনি যদি একজন ওয়েব ডিজাইনার হোন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের ইমেজ তৈরি করে তা রাখুন।
যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হোন তাহলে আপনার তৈরি করা ফেসবুক পেইজের স্ক্রীনশর্ট, ল্যান্ডিং পেইজের স্ক্রীনশর্ট, আপনার সেলের স্ক্রীন শর্ট ইত্যাদি দিয়ে রাখুন।
অর্থাৎ পোর্টফোলিও পেজটি এমনভাবে তৈরি করুন যাতে এক দেখাতেই আপনার ক্লায়েন্ট আপনার সম্পর্কে জানতে পারে। আপনাকে একজন বিশ্বাসযোগ্য ফ্রীল্যান্সার মনে করে।
Training is an Investment
In the Future of your Business
Learn Digital Marketing from Moshiur Monty – https://goo.gl/UG3F3h
৪. কন্টাক্ট পেজঃ
কন্টাক্ট পেজ একটি গুরুত্বপূর্ন পেজ। প্রতিটি ওয়েবসাইটে কন্টাক্ট পেজ থাকা উচিত এবং থাকেও। আপনার ওয়েবসাইটেও একটি কন্টাক্ট পেজ তৈরি করুন। কোন ভিজিটর বা ক্লায়েন্ট যাতে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে।
সোস্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে মার্কেটিং~~
১. লিঙ্কডিনঃ
গিগ মার্কেটিং এর জন্য একটি অন্যতম মাধ্যম লিঙ্কডিন। এখানে সকল ধরণের প্রোফেশনাল ব্যক্তিদের পাবেন। এই সোস্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে আপনি টার্গেটেড কানেকশন বৃদ্ধি করেন। তারপর আপনার নিয়মিত সার্ভিস সম্পর্কিত বিভিন্ন পোষ্ট করুন। মাঝে মাঝে আপনার ওয়েবসাইটের গিগের পেইজটি পোষ্ট করুন। কখনো একটি গিগের ছবির সাথে লিঙ্ক দিয়ে, কখনো সরাসরি গিগ পেইজের লিঙ্ক দিয়ে আবার কখনো সরাসরি ফাইভারের গিগের লিঙ্ক দিয়ে মার্কেটিং করতে পারেন। লিঙ্কডিনে মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে টার্গেটেড ব্যাক্তিদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করুন। ভালো সম্পর্ক কিছুদিন আগে হোক বা পরে হোক আপনাকে গিগ সেল হতে সাহায্য করবে।
২. টুইটারঃ
টুইটার আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনার জন্য আরেকটি গুত্বপূর্ন সোশ্যাল মিডিয়া। টুইটারে কাজ সম্পর্কিত ট্যাগ ব্যবহার করে টুইট করে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসুন। আপনার সার্ভিস অনুযায়ী ব্যক্তিদের টার্গেট করে ফলো করুন এবং ফলোয়ার বানান। তারপর টুইটারে মার্কেটিং করুন।
৩. ওয়ারিয়র ফোরামঃ
মার্কেটারদের গিগ বিক্রয় করার জন্য ওয়ারিয়র ফোরাম একটি বড় সোর্স। এখানে অনেক মার্কেটার থাকে। আপনি বিভিন্ন মার্কেটারের ছোট ছোট কাজ করে দিতে পারেন। যেমনঃ ল্যান্ডিং পেইজ তৈরি, ইমেল টেম্পলেট তৈরি, ফেসবুক পেইজ তৈরি, সোশ্যাল একাউন্ট তৈরি, ইমেল ক্যাম্পেইন তৈরি ইত্যাদি। যেহেতু তারা বড় মার্কেটার তাই তারা বিভিন্ন ছোট কাজগুলো অন্যদের দিয়ে করিয়ে নেয়। তাই আপনিও চাইলে এখানে আপনার মার্কেটিং গিগ গুলো প্রচার করে গিগ বিক্রয় করতে পারেন। এই জন্য অন্যান্য মার্কেটারের পোষ্টে কমেন্ট করুন তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। ওয়ারিয়র ফোরামে কাজ করত এহলে প্রথমে এর নিয়ম কানুন জেনে নিন।
৪. Quora:
আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর পাওয়ার জন্য একটি বড় সোর্স হল Quora. এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে প্রচুর পরিমান ভিজিটর তৈরি করতে পারেন। সেই ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে পাঠান। ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইট থেকে আপনার গিগে যাবে এবং প্রয়োজনীয় গিগটি কিনে নিবে।
৫. ফেসবুক গ্রুপঃ
ফেসবুক গ্রুপ গিগ সেল করার একটি গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম। আপনার গিগ সেল করার জন্য আপনার সার্ভিস অনুযায়ী গ্রুপ গুলোতে জয়েন করুন। যেমনঃ আপনি যদি ব্যবসায়িক কার্ড বা লোগো ডিজাইন বিক্রয় করতে চান তাহলে বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইন গ্রুপ এবং ব্যবসায়িক গ্রুপ গুলোতে জয়েন করুন। গ্রুপে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে আপনার ওয়েবসাইটের পোর্টফলিও পেইজে ভিজিটর আনার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের আপানর ওয়েবসাইটে নিয়ে আসতে পারলে তারা তাদের সহযোগী হিসেবে আপনার গিগ অর্ডার করবে, আবার ব্যবসায়িদের আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে আসলে তারা ব্যবসায়িক কার্ড বা লোগোর জন্য গিগ অর্ডার করবে।
৬. ইউটিউব ভিডিও
আপনার সার্ভিস গুলো এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, মূল্য, কাজের স্যাম্পল সহ একটু ভিডিও প্রেজেন্ট করার চেষ্টা করুন, যেনো সহজেই আপনার সার্ভিস সম্পর্কে ধারণা চলে আসে এবং এর পর নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ড টার্গেট করে ভিডিওটি র্যাঙ্ক করার চেষ্টা করুন।
কেউ যদি ওয়েবসাইট ছাড়া সরাসরি গিগ বা ফাইবার প্রোফাইলএর মাধ্যমে গিগ মার্কেটিং করতে চান সেটাও করতে পারেন। তখন উপরে উল্লেখিত সোস্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে আপনার গিগ সরাসরি সেল করতে পারেন। তবে আবারও বলছি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মার্কেটিং করলে পোর্টফলিও এবং প্রোফেশনালিজম দেখানোর মাধ্যমে অনেক টার্গেটেড ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়।
মনে রাখবেন, আপনি যতবেশি মার্কেটিং করতে পারবেন আপনার গিগ সেল হওয়ার সম্ভবনা তত বেশি বাড়তে থাকবে, অল্প কাজেই যদি অনেক সফলতা পাওয়া যেতো তাহলে পৃথিবীতে কাউকে অলস বা ব্যর্থ বলা হতো না এবং সফলদের অনেক সম্মান দেয়া হতো না।
Moshiur Monty
Digital Marketing Trainer, Bdjobs Training.
অনুপ্রেরণা যোগাতে আমার সাথেই থাকুন ~~ https://www.facebook.com/MoshiurMontyBD/
ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত বাংলা আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুনঃ
Your email address will not be published. Required fields are marked *